জাতীয়

শিক্ষক প্রশিক্ষণের’ ভাইরাল ভিডিও বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা

  প্রতিনিধি ৬ ডিসেম্বর ২০২৩ , ২:১৩:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

Mqdefault

নিউজ ডেস্ক: নতুন শিক্ষাক্রম সমালোচনার মুখে ফেলেছে বেশ কয়েকটি ভাইরাল ভিডিও। তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই রোববার (৩ ডিসেম্বর) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি দাবি করেন, ‘ফেসবুকে ছড়ানো ভিডিওগুলো আমাদের (মাধ্যমিক) শিক্ষাক্রমের অংশ নয়। বিশেষ গোষ্ঠী এগুলো ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকেও একই কথা জানানো হয়। পাশাপাশি অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করা হয়।

ফেসবুক-ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে ‘শিক্ষক প্রশিক্ষণের’ ভিডিওগুলো। দেশের ফেসবুক ব্যবহারকারী অনেকে সেগুলো শেয়ার করে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করছেন। ভিডিওগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে চলছে তর্ক-বিতর্ক-ঝগড়া। কেউ কেউ ভিডিও কনটেন্ট বানিয়েও ছড়িয়ে দিচ্ছে।আসলেই কি ভাইরাল ভিডিওগুলো নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষক প্রশিক্ষণের?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে দেখা যায়, সম্প্রতি ছড়ানো ভিডিওগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ‘টিরিং টিরিং সাইকেল চালাই’, ‘আবৃত্তির সঙ্গে ব্যাঙ লাফ’, ‘হাঁসের প্যাঁক প্যাঁক ডাক দিতে দিতে হেঁটে চলা’, ‘শরীর-মাথায় দেবদারু পাতা জড়িয়ে জংলি সাজ’, ‘মধু-মালতি গানের সঙ্গে শিক্ষক-ছাত্রীদের নাচ’, ‘চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীর বিদায় অনুষ্ঠানে গাওয়া গান’, ‘রাজশাহী-দিনাজপুরে আম-লিচু পাঠানোর গান’।

প্রতিটি ভিডিও সম্পর্কে জানতে অনুসন্ধানে দেখা যায়, কিছু ভিডিও বাংলাদেশেরই নয়। কয়েকটি ভিডিও বেশ কয়েক বছর আগের প্রশিক্ষণের। সেগুলো শিক্ষাক্রমের অংশ নয়। প্রশিক্ষণের ফাঁকে শিক্ষকদের একঘেঁয়েমি দূর করতে বিনোদনমূলক কার্যক্রম। আবার কোনো ভিডিও শারীরিক শিক্ষা ক্লাসের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য, যা আগেও ছিল। ভাইরাল ভিডিওগুলোর মধ্যে শুধু হাঁসের ডাক দিতে দিতে দুই হাত মেলে হাঁটার ভিডিওটি প্রশিক্ষণের অংশ। গণিত শেখাতে এ প্রক্রিয়া রয়েছে। আর পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর গান গাওয়ার ভিডিওটি বিদায় অনুষ্ঠানের।
টিরিং টিরিং সাইকেল চালাই
সম্প্রতি ফেসবুকে সবচেয়ে আলোচিত ‘টিরিং টিরিং সাইকেল চালাই’ আবৃত্তি করা ভিডিওটি। তাতে দেখা যাচ্ছে, একজন ব্যক্তি সাইকেল চালানোর অঙ্গভঙ্গি করে একটি কবিতা আবৃত্তি করছেন। ভিডিওটি বাংলাদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা গত কয়েকদিন ব্যাপকভাবে শেয়ার করছেন। বলা হচ্ছে, এটি নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ। তবে অনুসন্ধানে জানা যায় পুরো ভিন্নচিত্র। এটি আসলে বাংলাদেশেরই কোনো ভিডিও নয়। আসামের ধুবরি জেলার একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণের ভিডিও এটি। বাংলাদেশিরা এটিকে ‘টিরিং টিরিং সাইকেল চালাই’ বলে উল্লেখ করলেও আসলে এটি ‘টিলিং টিলিং ছাইকেল চলাই ফেৰিৱালা যায়..কবিতা। ধুবরি জেলার একটি স্কুলে ক্লাসে কবিতাটা অভিনয় করে শেখানোর ভিডিও।

ধুবরি মিউনিসিপাল হাই স্কুলের শিক্ষক মুকুট শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভিডিওটি দেখে জানান, কবিতাটি আসামের বিভিন্ন স্কুলে পড়ানো হয়। তিনি বলেন, ‘এ কবিতাটি আসামে ‘ভঙ্গিমা গীতি’ হিসেবে পরিচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে স্কুলে এটি অভিনয় করে পড়ানো হয়। বিভিন্ন যানবাহন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের পরিচিত করে তুলতে এটা প্রাইমারি লেভেলে শেখানো হয়। এছাড়া প্রশিক্ষণের যে ভিডিওটা ভাইরাল হয়েছে, সেটা অনেক পুরোনো।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) শিক্ষাক্রম ইউনিটের সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ম্যানুয়াল (শিক্ষাক্রম প্রশিক্ষণের নির্দেশাবলি) নতুন শিক্ষাক্রমে আছে বলে আমার জানা নেই। যদিও আমি মাধ্যমিক নিয়ে কাজ করছি। তবে এটা আমাদের এখানকার নয় বলে জেনেছি।’

ব্যাঙ লাফ দিতে দিতে আবৃত্তি
ওরে ও কোলা ব্যাঙ… এ কবিতা বা গানটি বেশ আগে থেকেই পরিচিত। অনেক আগে থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক এটি শিক্ষার্থীদের শেখান এবং তা পিটি করানোর সময় অভিনয় করে দেখান। প্রশিক্ষণের সময়ও সেটা শিক্ষকদের শেখানো হয়। শিক্ষকরা বলছেন, ‘বাচ্চাদের আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি শারীরিক কসরতে এ ব্যাঙলাফ ও আবৃত্তি নতুন নয়।’ তবে হঠাৎ ব্যাঙ লাফের একটি প্রশিক্ষণের ভিডিও গত কয়েকদিন ধরে ছড়িয়ে পড়েছে। তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ চলছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘রহিম ভাই’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে গত ২৯ নভেম্বর এটি রিলস ভিডিও হিসেবে শেয়ার করা হয়। ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রম কীভাবে শেখাবে যদি শিক্ষকেরা না শেখেন, তাই আগে শিক্ষকদের শিখতে হবে।’ দ্রুত তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুর পর্যন্ত ভিডিওটি দেখেছেন প্রায় ৩৪ লাখ মানুষ। লাইক-কমেন্ট করেছেন ২৪ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী। কয়েক হাজার ব্যবহারকারী রহিমের পোস্টটি শেয়ার করেছেন। পাশাপাশি অনেকে ভিডিওটি ডাউনলোড করেও শেয়ার করছেন।

রহিম ভাই নামে ফেসবুক আইডি থেকে এটি প্রথম শেয়ার করা হয়

‘রহিম ভাই’ নামের ওই ফেসবুক আইডিতে এরপর ধারাবাহিকভাবে আরও কয়েকটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। সেগুলোও নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণের ভিডিও বলে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে। এমনকি আসামের টিলিং টিলিং সাইকেল চালানোর ভিডিওটিও তিনি শেয়ার করেছেন বাংলাদেশের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে। এ ব্যাপারে জানতে রহিম ভাই নামের ফেসবুক আইডিধারী আব্দুর রহিমকে এসএমএস ও মেসেঞ্জারে কল দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি ফেনীর সোনাগাজী সমিতির আজীবন সদস্য। সোনাগাজী সমিতির ক্রোড়পত্রে থাকা তার মোবাইল নম্বরে কল দেওয়া হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

হাঁসের ডাক দিতে দিতে হাঁটা
ভাইরাল ভিডিওগুলোর মধ্যে হাঁসের ডাক দিতে দিতে হাঁটার ভিডিওটি বাংলাদেশের শিক্ষক প্রশিক্ষণের। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় গত বছরের (২০২২) অক্টোবর-নভেম্বরে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এটি নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ নয়। আগের শিক্ষাক্রমে চতুর্থ শ্রেণির ‘আনন্দে গণিত শিখি-কনটেন্ট ডেলিভারি বুক’-এ ম্যানুয়ালটি রয়েছে। এটি মূলত গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রাথমিক (প্রথম-পঞ্চম) শিক্ষার্থীদের গাণিতিক দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ম্যানুয়াল গাইডের আইডিয়া ‘৯.১: প্যাঁক প্যাঁকের দৌড়াদৌড়ি’ শিরোনামে একটি অধ্যায়ে শিক্ষার্থীদের গল্প-অভিনয়ের সংমিশ্রণে আনন্দে গণিত শেখানোর বিষয়টি রয়েছে।

হাঁসের প্যাঁক প্যাঁক ডাকের সঙ্গে হাঁটা আনন্দে গণিত শিখি বইয়ের অংশ।অধ্যায়ের প্রথম ধাপে বলা হয়েছে, ক্লাসে আসার আগে একটি লম্বা স্ট্রিপ বানিয়ে আনুন। দ্বিতীয় ধাপে বলা হয়, ক্লাসে এসে স্ট্রিপটি শিক্ষার্থীদের দেখান। এরপর হাঁসের গল্প শোনাতে বলা হয়েছে। গল্পে রয়েছে, এক বনে এক হাঁস ছিল, তার ছিল এক ছোট্ট ছানা। হাঁসের ছানাটি ছিল ভারি চঞ্চল। সারাদিন এদিক-সেদিক প্যাঁক প্যাঁক শব্দে লাফিয়ে বেড়াতো। এ নিয়ে মা হাঁসটির চিন্তার শেষ নেই। এই বুঝি ছানা হাঁসটির কখন কী হয়ে যায়! ছানা হাঁসটি ব্যস্ত রাখার জন্য মা হাঁস নতুন নতুন খেলা বের করতো এবং সেগুলো দিয়ে ছানাটি নিজের চোখে চোখে রাখতো…।

এখনো কি প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে? শুরু হলেও প্রশিক্ষণের আংশিক ভিডিও বাইরে আসছে কেন? কারা শেয়ার করছেন—এগুলো নিয়ে একটু চিন্তা-ভাবনা করলেই বোঝা যায়, তাদের উদ্দেশ্য কী? বিশেষ একটি মহল শিক্ষাক্রম না পড়ে, কী আছে তা না জেনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা কথা লিখছেন। আমরা এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন নই।– জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের শিক্ষাক্রম ইউনিটের সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান

এভাবে পুরো গল্পের বিবরণ দিয়ে তৃতীয় ধাপে বলা হয়েছে, শ্রেণি কার্যক্রম আনন্দময় করার জন্য শিক্ষার্থীদের বলুন—কে, কত প্যাঁক প্যাঁক করে হাঁটতে পারে, তা মাপা হবে। এরপর শিক্ষার্থীদের একজন করে ডেকে প্যাঁক প্যাঁক করে হাঁটতে বলুন। যে যতদূর এক দমে হেঁটে যাবে, তা মেপে রাখুন। মূলত দশমিক ভগ্নাংশ শেখানোর জন্যই এ প্রক্রিয়া অবলম্বনের নির্দেশনা রয়েছে ম্যানুয়াল গাইডে। সেটাই শিক্ষার্থীদের কীভাবে করানো হবে, তা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেটা আগের শিক্ষাক্রম অনুযায়ী। নতুন প্রণীত শিক্ষাক্রম এখনো চতুর্থ শ্রেণিতে চালু হয়নি। চতুর্থ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে ২০২৫ সালে।

 

জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এটা গণিত অলিম্পিয়াড প্রশিক্ষণের একটি অংশ। এ প্রশিক্ষণ আমি পাইনি বা দিইওনি। শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ দেন। তবে প্রশিক্ষণের যে ম্যানুয়াল, সেখানে এ অংশটুকু আছে। ২০২২ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে প্রশিক্ষণ হয়। আমরা প্রশিক্ষণের আয়োজন করি। শিক্ষকদের মধ্যে মাস্টার ট্রেইনাররা এ প্রশিক্ষণ দেন।’

জংলি সাজে উদ্ভট ভাষায় অভিনয়, শরীর-মাথায় দেবদারু পাতা জড়ানো। হাতে কাঠের লাঠি। হাফ-প্যান্ট পরে জংলি সাজে নৃত্য করছেন কয়েকজন ব্যক্তি। তারা ঠিক কী ভাষায় কথা বলছেন, তাও বোঝা দায়। ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এমন দৃশ্য। এটিকেও নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ বলে চালিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। তবে এটিও বাংলাদেশের শিক্ষক প্রশিক্ষণের কোনো ভিডিও নয় বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। নতুন শিক্ষাক্রমেও এমন কোনো পাঠ্য নেই।

শিক্ষক-ছাত্রীদের নাচ ‘মধু মালতি ডাকে আয়…’ গানের সঙ্গে একজন সহকারী শিক্ষক ও কয়েকজন ছাত্রীর নৃত্যের ভিডিও নতুন শিক্ষাক্রমে শেখানো হচ্ছে বলে ভাইরাল হয়েছে। রাজধানীর একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের (নাম অপ্রকাশিত রাখা হলো) ভিডিও এটি। গত আগস্টে ভিডিওটা ধারণ করা হয়। মূলত স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা পারফর্ম করবে—এজন্যই নৃত্য অনুশীলন করানো হচ্ছিল। সেখানে কয়েকজন শিক্ষিকাও ছিলেন। এটি নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মকর্তারাও খোঁজ-খবরও নিয়েছেন। এটি নতুন শিক্ষাক্রমের অংশ নয়।

বিদায় অনুষ্ঠানে শিক্ষিকাকে নিয়ে গান
পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠে যাবে—এমন শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে গান গেয়ে ভাইরাল হয়েছে ছোট্ট এক ছাত্রী। ভিডিওতে দেখা যায়, বাংলার লোককাহিনিনির্ভর ‘রূপবান’ গানের সুরে কিছু শব্দ পাল্টে বিদায়ী গান গাইছে ওই ছাত্রী। অনুষ্ঠানে অতিথি প্রধান শিক্ষিকা। তাকে ঘিরেই লেখা একটি গান সব শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে গেয়ে শোনায় ওই ছাত্রী। উত্তরবঙ্গের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী সে (স্কুল, ছাত্রী ও শিক্ষকের নাম অপ্রকাশিত রাখা হলো)।

ওই স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষক গানটি লিখে দেন। তিনি কয়েকদিন ওই ছাত্রীকে অনুশীলন করিয়ে বিদায় অনুষ্ঠানে গাইতে বলেন। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি, স্মৃতিচারণও করে শিক্ষার্থীরা। তবে সব ছাপিয়ে দারুণ সুরে বিদায় চাওয়ার গানটি ভাইরাল হয়। সেটিকে নতুন শিক্ষাক্রমে শেখানো হচ্ছে বা শিক্ষাক্রমের অংশ বলে অপপ্রচার শুরু করেছে অনেকে। এটি কোনোভাবেই নতুন শিক্ষাক্রমের অংশ নয় বলে নিশ্চিত করেছে এনসিটিবি এবং ওই স্কুলের শিক্ষকরাও।

নতুন শিক্ষাক্রমে প্রশিক্ষণ শুরু ৯ ডিসেম্বর
নতুন শিক্ষাক্রমে উপজেলা পর্যায়ে এখনো প্রশিক্ষণই শুরু হয়নি। মাস্টার ট্রেইনারদের কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আগামী ৯ ডিসেম্বর উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ শুরু হবে। অর্থাৎ, ভাইরাল ভিডিওগুলো নতুন শিক্ষাক্রমে প্রশিক্ষণে হওয়ার প্রশ্নই আসে না, বলছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মকর্তারা।

মাউশির ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিমের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে গত ২৮ নভেম্বর এ তথ্য জানানো হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণে বেশি শিক্ষকের অংশগ্রহণ থাকে। এর আগে কিছু মাস্টার ট্রেইনার নিয়ে কাজ করেছি আমরা। ৯ ডিসেম্বর থেকে উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ হবে। ফেসবুকে ছড়ানো ভিডিও এ বছরের প্রশিক্ষণের নয়।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের শিক্ষাক্রম ইউনিটের সদস্য অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘এখনো কি প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে? শুরু হলেও প্রশিক্ষণের আংশিক ভিডিও বাইরে আসছে কেন? কারা শেয়ার করছেন—এগুলো নিয়ে একটু চিন্তা-ভাবনা করলেই বোঝা যায়, তাদের উদ্দেশ্য কী? বিশেষ একটি মহল শিক্ষাক্রম না পড়ে, কী আছে তা না জেনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা কথা লিখছেন। আমরা এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন নই।’

এনসিটিবি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তাতে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে। কঠোর পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সমালোচনা সহ্য করছি। যদি পরিমার্জন করার দরকার পড়ে, সেটাও করছি। কিন্তু নবির (মহানবি) ছবি আঁকতে বলা হয়েছে—এমন ভয়ানক মিথ্যাচার চালানোয় বাধ্য হয়ে আমরা একটা মামলা করেছি। তাছাড়া এসব সমালোচনা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। আমরা সঠিকভাবে কাজটি করে যাচ্ছি। আশা করি অভিভাবকসহ সব মহল দ্রুত এটা (নতুন শিক্ষাক্রম) যে ভালো একটি শিখন প্রক্রিয়া, তা বুঝতে পারবেন।

সুত্রঃ জাগো নিউজ

আরও খবর

Sponsered content