প্রতিনিধি ২৩ নভেম্বর ২০২৩ , ১২:৫২:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক: জিনজিয়াংয়ের পর মুসলিম অধ্যুষিত স্থান হিসেবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলীয় নিংজিয়া ও গানসু অঞ্চল। এখানকার শত শত মসজিদ বন্ধ করে দিচ্ছে চীনা কর্তৃপক্ষ। চীনের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ধর্মান্তরিত করার অংশ হিসেবে মসজিদগুলো বন্ধ করছে দেশটি। একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বুধবার (২২ নভেম্বর) এই খবর প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউএ) বলছে, সংখ্যালঘুদের চীনাকরণ করার অংশ হিসেবে মসজিদগুলো বন্ধ করছে চীনা সরকার।
গার্ডিয়ানের তথ্য মতে, নিংজিয়ার দুটি গ্রামে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সাতটি মসজিদের মিনার ও গম্বুজ ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে চারটি মসজিদকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই চার মসজিদের মধ্যে আবার তিনটির প্রধান ভবন ধ্বংস করা হয়েছে এবং অপরটির অজু করার স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
একটি সরকারি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বন্ধ হওয়া এসব মসজিদের সংখ্যা শত শত। নিংজিয়া প্রদেশের ঝোংওয়েই শহরে ১০ লাখের বেশি মানষের বসবাস। ২০১৯ সালে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলো, সেখানে তারা ২১৪টি মসজিদের স্থান পরিবর্তন, ৩৭টি নিষিদ্ধ ও ৫৮টি মসজিদ একত্রিত করেছে।
এক সাক্ষাৎকারে নিংজিয়ার কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম বলেন, ‘আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে দুটি মসজিদ থাকলে সেগুলো এক করে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মসজিদগুলো বন্ধ হওয়ায় অনেক তরুণ ও মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিরা ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এভাবে চলতে থাকলে পরবর্তী প্রজন্ম ধীরে ধীরে ইসলামের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে। আর এভাবেই মুসলিমদের চীনাকরণ ঘটবে।’
চলতি বছরের মে মাসে, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ইউনান প্রদেশের একটি শহরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভে জড়িয়ে পড়ে হুই মুসলিমরা। একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় মসজিদের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হলে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
চীন সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘আইন অনুযায়ী, চীনের সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে। ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করে এমন নীতি অনুসরণের মাধ্যমে চীন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আইন অনুযায়ী ধর্মীয় বিষয়গুলো পরিচালনা করে। আমরা ধর্মীয় উগ্রবাদ বর্জন এবং এর বিপক্ষে লড়াইয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আইন অনুসারে ধর্মপ্রাণ মানুষদের স্বাভাবিক ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন নিশ্চিত এবং তাদের রীতিনীতির সম্মান করে চীন।’
উল্লেখ্য: ২০১৬ সালে ধর্মকে চীনাকরণের আহ্বান জানিয়েছিলেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ২০১৮ সালের এপ্রিলে চীনা সরকার ইসলামি ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দেন। এরপর থেকে এসব স্থাপনাগুলোর ক্ষেত্রে ‘বেশি ধ্বংস এবং কম নির্মাণ নীতি’ মেনে চলা শুরু করে কর্তৃপক্ষ।