অপরাধ

বাবার লাশ টুকরো টুকরো করার লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন ছেলে

  প্রতিনিধি ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১:২৮:০০ প্রিন্ট সংস্করণ

Chapai 2307261423

নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রামে বাবাকে হত্যার পর বড় ছেলে মুস্তাফিজুর রহমান (৩২) কিভাবে মরদেহ টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়েছিল আদালতে তার স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি এ জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে বাবা মো. হাসান (৬০)কে কি কারনে হত্যা করে দেহ খন্ড খন্ড করে খন্ডিত অংশ কিভাবে ফেলা হয়েছিল তার লোমহর্ষক বর্ণনা দেন।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি ভাই বোনদের মধ্যে সবার বড় আমার ছোট ভাই ও বোন রয়েছে। আমার যখন ৬ থেকে ৭ বছর বয়স, তখন বাবা শহরে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর থেকে তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। অনেক বছর হয়ে যাওয়ায় এলাকার মানুষ আত্মীয়-স্বজন সবাই মনে করেছে বাবা মারা গেছে। আমরা মায়ের ও দাদির কাছে থেকে অনেক সংগ্রাম করে বড় হয়েছি। আমি কৃষি কাজ করেছি ছোট ভাই অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে আর করতে পারেনি শেষে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি নিয়েছেন। বোন রাজিয়াকে বিয়ে দিয়েছি।

বাবা না থাকায় আমার চাচা চাচি আমাদের বাপের ভিটা থেকে বের করে দেয়ার জন্য অনেক অত্যাচার করেছে। আমাদের কখনো পুকুরের মাছ গাছের কোন ফল ধরতে দেয়নি। কারো কাছে বিচার দিতেও পারেনি। বাবা চলে যাওয়ার কয়েক বছর পর দাদী ও মারা যায়। ১০-১২ বছর আগে বোনকে বিয়ে দিয়েছিলাম সেখানে সংসার করতে পারেনি পরবর্তীতে আবার তাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়েছি। ছোট ভাই ও নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছে। আমিও কিছুদিন আগে বিয়ে করেছিলাম। সংসারের অভাব অনটনের কারণে সাত মাসের বাচ্চা নিয়ে আমার স্ত্রী শ্বশুর বাড়ি চলে গেছে।

হঠাৎ দুই বছর আগে হঠাৎ একদিন বাবা বাসায় ফিরে আসে। তার কাছে জানতে পারি সে জাহাজে চাকরি করতো আবার পুনরায় বিয়ে করেছে। সাত-আট মাস আমাদের এখানে থাকার পরে আবার হঠাৎ করে একদিন উধাও হয়ে যায়। আমাদের সাথে ২-৩ মাস হলো যোগাযোগ ছিল না তবে তখন সে আমার চাচা চাচির সাথে যোগাযোগ রেখেছে। চাচা চাচি তার কাছ থেকে সম্পত্তি কিনে নিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে তাড়ানোর পাঁয়তারা করে। এরপর আবার কিছুদিন পরে ফিরে এসে আমাদের সাথে না থেকে চাচার ঘরে থাকা শুরু করে। তখন এলাকার মেম্বার আমাদের ডেকে বলে বাবাকে ঘরে নিয়ে আসো। এরপর বাবাকে বুঝিয়ে ঘরে নিয়ে আসলে সে মায়ের সাথে প্রায়ই ঝগড়া করে তালাক দিয়ে দিবে এবং বাড়িঘর বিক্রি করে দেয়ার হুমকি দেয়। ৫/৬ দিন থাকার পর আবার সে বাড়ি থেকে না বলে চলে যায়।

এরপর গত ১৯ সেপ্টেম্বর আমার মা শহরে ছোট ভাইয়ের বাসায় ডাক্তার দেখানোর জন্য গেলে বাবা একদিন রাতে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়। ছোট ভাই আমাকে ফোনে জানালে আমিও সেখানে যাই। কিন্তু বাবা রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আমাদের সাথে কোন কথা বলেনি। পরদিন সকালে বাইরে থেকে নাস্তা নিয়ে এসে দেখি ছোট ভাই এবং বাবা এক রুমে বসে আছে। আমরা তিনজন বসে কথা বলার সময় বাবা এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে বলে তোরা আমার সন্তান না। এ কথা শুনে আমার মাথা গরম হয়ে যায়। আমি বাবার গলা চেপে ধরলে সে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যায়। এরপর খাটের নিচে থেকে বস্তা বের করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে থাকি কি করা যায়।

সন্ধ্যায় ছোট বোনের স্বামীকে ফোন করে ডেকে এনে মাকে তাকিয়ে গিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিই। সন্ধ্যার পরে ছোট ভাইকে নিয়ে আজ কিভাবে করব সেটা চিন্তাভাবনা করে পরবর্তীতে বুদ্ধি করি এটা টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দিব। সে অনুযায়ী ঘরে থাকা দা দিয়ে আমি প্রথমে মাথা কাটি, তারপর দুটি হাত ও হাঁটুর ওপর থেকে পা কাটি। তারপর হাতটা ৪ টুকরা আর পা ৪ টুকরা করি।আগে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে বডি প্লাস্টিকের চালের বস্তায় ঢুকাই। হাত এবং পায়ের টুকরো অংশ নাকে যে ভরি আর মাথা একটি শপিং ব্যাগের মধ্যে ভরে রাখি। পরে রাত তিনটার দিকে বস্তায় ভরা লাশের কিছু অংশ খালে ফেলে দিয়ে আসি। পরদিন সকালে ছোট ভাইয়ের বউ আর আমি দুজনে মিলে টলি ব্যাগ ১২ নম্বর ঘাটের পাশে আর ছোট ভাই মাথার ভর্তি শপিং ব্যাগ ১৫ নম্বর ঘাটের ওখানে ফেলে দিয়ে আসে।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর পতেঙ্গা থানার ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় মানুষের শরীরের কিছু খণ্ড পাওয়া যায়। এরপর তার পরিচয় শনাক্ত এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত ভুক্তভোগী স্ত্রী ও ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের আদালতের অনুমতি নিয়ে রিমান্ডে আনা হয়। রিমান্ড শেষে আজকে (বুধবার) দুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এর মধ্যে ভুক্তভোগীর ছেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

উল্লেখ্য: গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থানার ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় ঝোপের মধ্যে একটি লাগেজ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা থানায় খবর দেন। পরে লাগেজটি খুলে মানুষের শরীরের ৮টি খণ্ড পাওয়া যায়। এসব খণ্ডের প্রত্যেকটি টেপ দিয়ে মোড়ানো ছিল।

 

 

 

আরও খবর

Sponsered content