নাসির উদ্দিন টিটু ১৫ জুন ২০২৫ , ১২:৪৭:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক: ঢাকার কেরানীগঞ্জে বিভিন্ন এলাকা জুড়ে চলছে ক্লাব আতঙ্ক। অলিতে গলিতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ক্লাবগুলো এক একটি টর্চার সেলে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও সেখানে নিয়মিত বসছে জুয়ার আসর। পাশাপাশি স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যার বিচার করে টাকা পয়সা নেয়ার অভিযোগ আছে। জুয়া খেলার টাকা ও বিচারের টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে প্রায়ই করছে মারামারির ঘটনা। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন ও অভিভাবকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের দুই একটি করে অফিস( স্থানীয় ভাষায় ক্লাব নামে পরিচিত) ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দলের অফিস ছিল না। ৫ ই আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর নির্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক দলের সরকার না থাকায় বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ইউনিয়ন পর্যায়ে থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লায় অলিতে গলিতে রাজনৈতিক দলের অফিস খুলে বসেছে।
সরজমিনে ঘুরে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে শুভাঢ্যা, আগানগর ও জিনজিরা ইউনিয়নের পাড়া মহল্লা গুলোতে সবচাইতে বেশি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ক্লাবের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে।
শুভাঢ্যা ইউনিয়নের কালীগঞ্জ কৈবর্ত্যপাড়া নামে ৫শত বর্গমিটারের একটি গ্রামে কমপক্ষে ২০ হাজার লোকের বসবাস। গ্রামটিতে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন এবং আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কমপক্ষে ১৫টি ক্লাব (রাজনৈতিক দলের অফিস) ঘর রয়েছে। দলীয় প্রধানসহ থানা ও ইউনিয়নের নেতাদের ছবি টাঙিয়ে চেয়ার টেবিল দিয়ে সাজানো ক্লাবগুলো সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রায় প্রতিটি ক্লাবেই এ রাতে বসে জুয়ার আসর। এই ক্লাবগুলোর মধ্যে একটি ক্লাবে প্রায়ই মদের আসর বসানো হয়। স্থানীয এক যুবক সেটি দেখে ফেলায় কাউকে কিছু না বলার শর্তে ছেলেটিকে চুরির অপবাদ দিয়ে পরিবারের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। অপর একটি ক্লাবে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা পরিচয়ে পাওনা টাকার (সুদের টাকা) বিচার করে টেইলার্সের মালিক এক মহিলার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয় ।পরবর্তীতে বিষয়টি পার্শ্ববর্তী ছাত্রদলের আরেকটি ক্লাব জানতে পেরে,তারা সেটি ২০ হাজার টাকায় মীমাংসা করে।
কিছুদিন আগে শুভাঢ্যা ৫ নং ওয়ার্ডের চরকালিগঞ্জ বরইতলা এলাকায় তুচ্ছ ঘটনায় শ্রমিক দলের ক্লাবে নিয়ে এক মহিলাকে বেদম মারধরের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপক ভাইরাল হয়।
আগানগর আমবাগিচা ডিপজলের গলি এলাকায় এমন বেশ কয়েকটি ক্লাবের অস্তিত্ব রয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার রাতে সিগারেট কেনাকে কেন্দ্র করে সেখানকার দুটি ক্লাবের (ছাত্রদল ও যুবদল) নেতাদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় দেশীয় অস্ত্রের ব্যাপক প্রদর্শনীতে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
এমন ঘটনা উপজেলার বিভিন্ন ওয়ার্ডে অহরহ ঘটলেও এলাকাবাসীর ভয়ে থানা পুলিশে অভিযোগ না করায় দিন দিন ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন, ক্লাবে অবস্থান করা বেশিরভাগই উঠতি বয়সের ছেলেপেলে, তাদের কথাবার্তা চালচলনে কোন শিষ্টাচার নেই। তাই মান সম্মানের ভয়ে অনেকেই তাদেরকে কিছু বলতে সাহস পান না।
সারোয়ার আলম নামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জানান, ৫ই আগস্টের পর থেকে মব জাস্টিসের কারণে উশৃংখল ছেলেদের সাহস অনেক বেড়ে গেছে। তারা এখন থানা পুলিশকে ভয় পায় না। সেনাবাহিনীর যেহেতু ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার রয়েছে, তারা এ বিষয়ে একটু নজর দিলে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হবে।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন,এ সমস্ত ঘটনায় সাধারণত থানা পুলিশে কোন লিখিত অভিযোগ না করায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। আমাদের সীমিত জনগণ তারপরও এখন থেকে এ বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর চেষ্টা করব। পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে যেকোনো ঘটনা আপনারা পুলিশকে লিখিতভাবে জানাবেন,আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া বলেন, এ ধরনের কোন অভিযোগ আমি এখনো পর্যন্ত পাইনি। আজকেই আপনার কাছে শুনলাম। ৫ই আগস্টের পর থেকে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা না থাকায় এলাকা ভিত্তিক এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে উপজেলার অপরাধ কর্মকাণ্ড রোধে কাজ করছি। ভুক্তভোগীদের বলবো আমাদের কাছে লিখিত আকারে অভিযোগ দিতে,আমরা ব্যবস্থা নিব।
এন/টি #

















